কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টুইট করেছিলেন, জীবদ্দশায় এই দিনটিই তিনি দেখতে চেয়েছিলেন। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন টুইটে। তার তিন ঘণ্টার মধ্যে আচমকাই চলে গেলেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের রাজনৈতিক মহলে।
মঙ্গলবার রাতে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই বিজেপি নেত্রীকে। রাতে হাসপাতাল থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রয়াত হয়েছেন ৬৭ বছরের সুষমা। তিনি দীর্ঘ দিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন । গত বছরই কিডনি প্রতিস্থাপিত করা হয় তাঁর। স্বাস্থ্যের জন্যই ২০১৯-এর নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। সেই সমস্যা থেকেই মঙ্গলবার রাতে গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। সন্ধ্যা ৭.২৩ মিনিটে ৩৭০ ধারা বিলোপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছিলেন তিনি।
সাতবারের সাংসদ এবং তিন বারের বিধায়ক ছিলেন সুষমা। ১৯৭৭ সালে যখন হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। ১৯৯৮ সালে দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হন সুষমা। যদিও দু্ই মাসের বেশি স্থায়িত্ব হয়নি তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব। দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদভানির অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন এই নেত্রী।
২০০৪ সালে কর্নাটকের বেল্লারি থেকে ভোটে দাঁড়ান সনিয়া গান্ধী। ‘বিদেশিনি’ সনিয়ার বিরুদ্ধে ‘আদর্শ ভারতীয় নারী’ সুষমার সেই লড়াই ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক। কিন্তু রাজনীতির তিক্ততা কোনও দিন ব্যক্তিগত সম্পর্কে ছাপ ফেলেনি দুই নেত্রীর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘অসাধারণ বাগ্মী, শ্রদ্ধেয় সাংসদ ও দলমত নির্বিশেষে জনপ্রিয় এক নেত্রীকে হারালাম।’ টুইটে শোক প্রকাশ করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও।
সুষমার প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকজ্ঞাপনের ঢেউ ওঠে টুইটারে। রাতেই তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে টুইট করে কংগ্রেস। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শাবানা আজমি, জাভেদ আখতারের মতো রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্ন মেরুতে থাকা অনেকেই।
মাত্র কয়েক দিন আগেই মারা গিয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। স্বল্প ব্যবধানে চলে গেলেন দিল্লির দু’জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। রাতেই সুষমার দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকাল ১১টা পর্যন্ত সেখানেই রাখা থাকবে তাঁর দেহ। দুপুর ১২টা থেকে তিনটে পর্যন্ত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর দেহ শেষ শ্রদ্ধার জন্য রাখা থাকবে বিজেপির সদর দপ্তরে। বিকেল তিনটের সময় তাঁর শেষকৃত্য।